জল পড়ে পাতা নড়ে
সুকান্ত সিংহ
_______________________________
১।
মাথার পিছনে কোনো অলৌকিক আলো নেই
যা আছে তা আহত হবার এক দীর্ঘস্থায়ী
অহংকার বোধ ।
আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে জল নয়, গলে যায়
দুপুরের শ্বাস, মাঝরাতের নির্জনতা ।
সমস্ত জীবন জুড়ে আলিঙ্গন করে আছে
ভয় নয়, _______সহ্য ।
যা কেউ এসে ভেঙ্গে দেবে
২।
আগুনের কাছে এসে নত হই,
সচেতন ভেতরে ভেতরে !
৩।
চালধোয়া জল দিয়ে
হর-গৌরী বাঁচিয়ে তুলেছো,
এখনো জোড়াশালিক দেখতে না পেলে
সারাদিন ভয়ে ভয়ে থাকো,
সম্পর্কে বুঝি আজো
বাসাবদলের শব্দ ভেসে আসে
৪।
শ্রাবণের দিন জুড়ে বসে আছে
মন খারাপ, চৈত্র দুপুর
৫।
সমস্ত দুপুর জুড়ে নির্জনতা
বসে থাকে আমার কাছেতে,
ছায়ার বিস্তার জানি
সন্ধ্যার গল্প শেষ হয়,
আমাকে দেখতে দাও অন্ধকারটুকু
দেখতে দাও দিনের প্রণাম
৬।
সারা রাত জেগে, ঘরে ঘরে,
পাখিদের বাসা বোনে সেলাই মেশিন
৭।
ঘুমের ভেতর থেকে সাড়া দিই ।
ঘুমের ভেতর থেকে সাড়া দিই
অবিরত বয়ে চলা বাতাসের ডাকে ।
যে শরীর ঢেকে রাখি এক বিঘৎ
প্রশ্বাসের মাপে, সে শরীর ভিন্ন হয়ে
সরে যায় দূরের পাহাড়ে ।
যূথছুট হস্তিনীর মতো পরিত্যাগের
গন্ধে জড়সড় শরীরের দ্বিধা
মুছে দিতে সাড়া দিই
৮।
আত্মজীবনীর থেকে নেমে যাওয়া
ঝুরি ধরে দোল খায় বিকেলের মরারোদ,
ছেঁড়া ঘুড়ি, পুণ্যিপুকুর
৯।
পাথর ভাঙ্গার দেশে অন্ধ ছেলেকে তুমি
নিয়ে এসেছো ।
মা, আমাকে ঘিরে রাখো,
ঘিরে ঘিরে রাখো,
তোমার আঁচল জুড়ে একটু ঘুমাবো
ঘিরে রাখো,
যে রকম গান থাকে স্বরলিপি জুড়ে
১০।
একা একা দাঁড়িয়ে আছো
কিশোর দেবতা,
দেখছ,
তালা ও চাবির দেশে
কড়ানাড়া দূরে সরে আছে !
১১।
মৌনতা তুলে দিই
কিছু বলবার অজুহাতে
১২।
ঘরের ফাটলে রাখি ঈর্ষ-ক্রোধ-ঘৃণা
মাঝে মাঝে নিঃসঙ্গ হলে
তারা সব বেরিয়ে এসে আমাকে দংশন করে
আবার ফাটলে ফিরে যায়
১৩।
অসুখের অজুহাতে আসি ।
ওষুধের গন্ধভেজা হাত দিয়ে
স্পর্শ করো ।
বেশ,কিছুই হয়নি যদি,
আশার ইচ্ছেটুকু সারিয়ে দাও দেখি
১৪।
কপালের কাটা দাগ দেখে চিনে গেছি
গত জন্মে তুমি ছিলে
গুণিনের ক্ষয়াটে স্যাঙ্গাৎ
ফিরে এসো, দ্যাখো তোমার গল্প শুনতে
এক পোতে বসে পড়েছে
রোদ জল ধুলো ঝড় কাদা
১৫।
গান ফেরাচ্ছো তুমি ।
মনসা মঙ্গল ।
সাপে কাটা সন্তানের মুখ
ভেসে আসছে ।
আসর জানে না ।
১৬।
চলো খুঁজে আনি কবেকার
ভাসানো কাগজের নৌকো,
কখন জমেছে মধু নিজের কোরকে
চলো দেখে আসি,
এই জল কাদা ঘুম দেশে চলো
মাদলের শব্দ হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচি