প্রথমেই বলেছি শব্দকবিতা বিশেষ এক ধরনের i-কবিতা । কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও গঠনতন্ত্রে যখন তা মুক্ত । তখন আমরা তাকে ব্রাউজ মোডের শব্দকবিতা বলছি । এখানে কবি বিভিন্ন শব্দের সূত্র ধরে ভাবনার অনন্য ব্রাউজে মেতে উঠেন । ৩১-১২-২০০২ এ লেখা ( হিজিবিজি কবিতার বই থেকে ) একটা উদাহরণ দিই ।
শব্দকবিতা – ১
(শব্দসূত্র : বড় গাছ, ভালো জল, লাল ফুল, সোজা পথ, ছোটো পাতা )
সিংহপুর ৩১-১২-০২ সন্ধ্যা ৭ টা ১১ ::প্রতি সন্ধ্যায় আত্মোন্মচনের জন্য
আমি ছায়ার ভেতর ঘুরে বেড়ায়, বড় সুন্দর আলোর অভাব, আলোর প্রত্যাশা,
গাছেদের শ্বাসপ্রশ্বাসে সন্ধ্যার যে আফসোস জড়িয়ে থাকে, তার ইশারায় আজও
বাউন মাস্টারের ছড়ি ঘোরে, পাঠশালায় সেই নামতাপাঠ থেকে ভালো ছেলে
হতে প্রতি মুহুর্তে বেকারত্বকে সমস্ত রোমকূপ জুড়ে জিয়িয়ে রাখি, হয়তো আলো
ছিলো গ্রাস করেছি, বোঝা যায় আলোর পূর্বে সহজ একটা ছায়া থাকে, সে যন্ত্রণার
কিংবা যন্ত্রণার ভ্রুণ, এখন তৃষ্ণার্ত কাকের মতো জলে ঠোঁট ছোঁয়ায়, ঠোঁটে জল,
সেই জলের ভেতর কথাকলি তুমি কী সমবেদনা ছড়াতে আশ্রয় নাও, কী জানি,
সেই স্কুলব্যাগ, লালসাদা স্কার্ট আর মাথায় লাল ফিতের ফুলের পাশাপাশি
নারকেল তেলের গন্ধ খসে পড়ে আমার বুকে, আজও, এখন প্রতি সন্ধ্যায়
অরুনিমারা আসে, স্ত্রীর পাশে বসে গল্প করে, সারাদিন পোয়াল খড় মাড়াইয়ের
শেষে আমি তাদের ছায়াকে অনুসরণ করি, এটাই সোজা পথ, মাঝ পথে আলো
আসে তারপর ছায়া, পথ শেষ হওয়ার আগে শব্দের পর শব্দ আর শুকনো
ছোটো ছোটো পাতাকে আগলে রাখবো বুকের ভেতর, বুক পকেটে, তাদের
মর্মর লড়াইয়ের থেকে আমি কুড়িয়ে নেবো অন্ধকার, ছায়ার স্থায়িত্ব নেই, আলোর
স্থায়িত্ব নেই, আজ বুঝি ব্রহ্মাণ্ডে স্থায়ী অন্ধকার ।
এই ব্রাউজ মোডের শব্দকবিতাটিতে লক্ষ্য করুন শব্দসূত্র-এ সহায়তা নেওয়া হয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ থেকে । ইনস্ট্যান্ট রাইটিং-এর দ্রুততায় দেখুন ‘বড়’ ‘গাছ’ ‘ভালো’ ‘জল’ ‘লাল’ ‘ফুল’ ‘সোজা’ ‘পথ’ ‘ছোটো’ ‘পাতা’ শব্দগুলি শব্দসূত্রের একত্রিত রূপ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন নতুন ভূমিকায় স্ব স্ব অবস্থান নিচ্ছে কবিতার শরীরে । একেকটি শব্দের সূত্র ধরে উঠে আসছে অজস্র শব্দ । নানান কথা । কবি শব্দ + কথা + ভাবনার অনন্য আলাপচারিতায় মেতে উঠেছেন । পাঠক সেই কাব্যিক সৌন্দর্যের আলাপচারিতার আনন্দ নিতে থাকেন নিজের মতো করে ।
SRoy || ২/১/২০১৩ ২১:২২