সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো দিল্লী বইমেলা। নিরদ মজুমদার-এর ১ টি রিপোর্ট
——————————————————————
তোমাদের তীর্থ দেখে এলে?তীর্থদর্শন আমি মানি না।তবু বুকের ভেতর উথালপাতাল ঘটে, যখন দেখি আপামর পড়ুয়াদের কাছে তীর্থদর্শন যখন বইমেলা হয়।সদ্য শেষ হলো সপ্তদশ দিল্লী কালিবাড়ি বইমেলা।তার শেষ রেশটুকু নিয়েই চেষ্টা করছি অনুভূতিতে প্রয়োগ হওয়া অনুরণনটুকুর কম্পাংকের যতিচিহ্নের রেখাপথ আঁকার।একটা দেশের রাজধানী দিল্লীতে বাংলা বইমেলা, তাও ১৯১১র পর।যারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন এবং বলতে ভালোবাসেন এই মেলার দৃশ্যতা যেন তাদের জন্য।ভীষন সাজানো গোছানো।এক কথায় স্মার্ট।উদ্বোধন করলেন প্রখ্যাত ভাষা সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ শ্রী পবিত্র সরকার। দিল্লী-র প্রগতি ময়দানে আয়োজিত হোজ বা কলকাতা, সকলের প্রেক্ষিতে একে দেখলে, হয়তো ফাঁকে পড়ে যাবো।এই বইমেলা স্রেফ বইয়ের মেলা নয়, এই মেলা যেন মিলন ~ থাকবন্দী ইতিহাসের সঙ্গে কাটানো বৃষ্টির সংগোপন মুহূর্ত।যেখানে একই সঙ্গে অমর্ত্য সেন, ‘দেখি নাই ফিরে’ র বেইজ সঙ্গে ‘নীরা’ কে সঙ্গে নিয়ে টি শার্ট।
এই বইমেলায় ঘোরা মানুষদের গড় বয়স হয়তো ৫০-৫৫ বছর।এখানে আগত অধিকাংশই লেখক এবং পাঠক এবং সংগঠক।তারা নিজেরাই লিখেছেন, নিজেরাই হৈহৈ করে কবিতা পড়ছেন ~ হেঁড়ে গলায় গান গাইছেন।এ যেন অনেকটাই self author এর ব্যাঞ্জনায় বর্ণময়।এখানে ভিড় নেই, এখানে ব্যস্ততা নেই।চলতে থাকা বিভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠান রেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে মুহূর্মুহু এক অচিনপুরীর রূপকথায়।স্টলে রয়েছে নিজের লেখা বই, যা হাতে নিয়ে নিজেই দেখছেন – এই যোগাযোগ কি সৃষ্টির কোনো identity তৈরি করলো না স্রষ্টার কাছে?যেখানে স্রষ্টা এক মিথোজীবিতার কাছে মৃত।
সব মিলিয়ে সর্বমোট গোটা ৫০ স্টল।স্থানীয় এবং কলকাতা-র বাংলা প্রকাশনীগুলির এক অপূর্ব অভূত মেলবন্ধন।সঙ্গে বাংলাদেশের স্টলটি যেন অন্য মাত্রার মায়াজম্।গুরুচণ্ডালী, গাংচিল-দের পাশাপাশি ত্রিপুরা থেকে আগত স্রোত এবং তার সাথে বুটিক এবং অলঙ্কারের স্টল অনেকটা ফুরফুরে করে দেয় মেজাজ।ছোটো অথচ সুস্বাদু খাবারের স্টলের রকমারি স্বাদ কিছুদিন তো লেগে থাকবেই জিভে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সীমাবদ্ধতার মুক্তি কবি চাইবেন কিনা জানি না – কিন্তু কবিদের সমাগম এবং স্টলে স্টলে ঘুরে ঘুরে আড্ডা এবং গুলতানি যেন বেশ নেশা ধরায়।বিভিন্ন ধরনের আলোচনা এবং সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো পায়ের নীচে কার্পেটের মতোই মনোরম।যেমন কালিকাপ্রসাদ মঞ্চ – এরকমই তো হবার কথা ছিল।নিজস্বতাকে ধরে রাখার চেষ্টা।এই শিকড়গুলোর খোঁজ যেন গোলোকায়নের শিকড়হীন করে দেওয়ার অভিপ্রায়কে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয় – রাষ্ট্রকে ভাবতেও হয়, ভাবাতেও হয়।
আলোচনায় : নিরদ মজুমদার
(ছবি : সংগৃহীত বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন দিল্লী-র ফেসবুক পেজ থেকে)