Breaking News

লিফ্‌ট

বেশ অপেক্ষার পর আমিই ফোন করলাম। অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসল কে … দাদা। কয়েক মুহর্তের পরিচয়, এমনি হয়ে থাকে। তবেখুব বেশী সময় লাগেনি চিনে উঠতে। প্রথমেই না চেনার একটা কষ্ট বেরিয়ে আসছিল ওর কথায়। আমি প্রসঙ্গটা এড়াবার চেষ্টা করলাম। এমন ভাবে বলছিল যে, আমি তাকে লিফ্‌ট না দিলে কাল সন্ধায় বেশ বিপদেই পড়তে হত ওকে। আমার কাছে অবশ্য তেমনটি মনে হয়নি।

কাল ওর সাথে দেখা হবার বিষয়টি কোন ভাবেই মেলাতে পারিনি আমি। কোন ঘটনা নিয়ন্ত্রনের হাত তো আমাদের নেই। যারঁ আছে তিনিই হয়তো পুরনো স্মৃতির পর্দা টেনে দিলেন এভাবে। দেখা হলো ওর সাথে। বার বার মনে পড়ছে সেলেস্তিনার কথা। অনেক গভীর থেকে যাকে ভালবেসে ছিলাম একদিন। এক সাথে পড়তাম আমরা। তখন জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা হতো জেলা সদরে। পঞ্চম শ্রেণীতে মেধা বৃত্তিও পেয়েছিলাম আমরা দু’জন। নওগাঁ শহরের ছোট্ট যমুনার কোল ঘেষে মকবুলিয়া হোটেল। সেখানেই আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল আমাদের। ওরা দু’জন মেয়ে আর আমি। স্কুলের ফিজিক্যাল শিক্ষক মতি স্যার ছিলেন আমাদের সাথে। ভাড়া করা দু’টো রুমের একটাতে স্যার, অন্যটাতে আমরা তিনজন। মোট দু’দিন থাকলাম সেখানে। ভালবাসার কাউকে কাছে পাওয়ার সুযোগটা সেদিনি হয়েছিল। ভালবাসা যে কত রঙ ছড়াতে পারে এর আগে কখনো বুঝিনি।

ডিসেম্বারের শেষ সপ্তাহ। হাড় কাপাঁনো শীত। পরের দিন পরীক্ষার নোট রিভিশন চলছে।তখন অনেক রাত। স্যার এসে বল্‌ল ঘুমিয়ে পড়। রঙিন স্বপ্নে কেটে গেল রাত। পরীক্ষা শেষে বাড়ী ফিরে এলাম। ভর্তি হলাম নতুন ক্লাসে। জানুয়ারী মাস তেমন ক্লাসও নেই, নতুন বইও হাতে আসেনি তখনো। একুশের দেয়ালিকা প্রকাশের দায়ীত্ব পড়লো আমার উপর। সেলেস্তিনা বেশ ভাল লিখে।কিন্তু গেল এক সপ্তাহ ধরে ও স্কুলে আসছে না। স্বাভাবিক জ্বর-সর্দিতেও কোন দিন ক্লাস মিস করে না। বড় কোন অসুখ হয়েছে বলে মনে হয়। ওর মামতো বোন বাসন্তিও কয়েক দিন ধরে স্কুলে আসছে না। সেলেস্তিনার খবরও পাচ্ছিনা। তাই একদিন বিকেলে আমার বন্ধু সাখাওয়াতকে সাথে নিয়ে ওদের সান্তাল পাড়ায় গেলাম। শুনি গত এক সপ্তাহ হলো সেলেস্তিনারা স্বপরিবারে ভারতে পাড়ি দিয়েছে। নি:শব্দ এক আত্মচিত্কার দুর শালবনে মিলিয়ে গেল। শুধু অনুভব করলাম কয়েক ফোটা লোনাজল গড়িয়ে পড়ল আমার কপোল বেয়ে। সেলেস্তিনার মামাতো বোন বাসন্তী এসে বলল, ভাইয়া আপনি এসছেন। আপু একটি চিঠি দিয়ে গেছে আমাকে, আপনাকে দেবার জন্য। বাসন্তী দৌড়ে গিয়ে ওদের শনের বেড়ায় গুঁজে রাখা একটা কাগজের টুকরো এনে বল্‌ল, “এই নিন ভইয়া সেলেস্তিনা আপুর চিঠি।’’ তখনো সেলেস্তিনাদের ফেলে যাওয়া শনের বেড়ার ঘরে খেজুঁরপাতা পাটির উপর ওর বই-খাতা গুলো পড়ে আছে। এক পাল শুকুরের বাচ্চা ওগুলো নিয়ে খেলছে। যে বই-খাতা সেলেস্তিনা এতোদিন বুকে করে আগলে রাখতো। তা নিয়ে আজ খেলছে শুকুরের বাচ্চা! কি নির্মম সত্য দেখলাম।
বাসন্তীর দেওয়া ঐ কাগজের টুকরো আজো খুলে দেখার সাহস হয়নি আমার। বাহা উত্সবের হাত ধরে অনেক বসন্ত চলে গেছে। সকালের সূর্যালোর গাড়িতে চড়ে পাড়ি দিচ্ছে দুপুরের স্টেশন, তারপর সন্ধের বাড়ি। এখন কোন এক গেয়োঁ কলেজের শিক্ষকতা করছি আমি। অনেক দিন পর শালবন দেখার ছলে গিয়ে ছিলাম ওদের পাড়ায়। শাল পাতার বস্তা মাথায় এক শান্তাল মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম সেলেস্তিনার কথা। কোন কথা না বলে চলে গেল মেয়েটি।
একদিন যে শালবন ভালবাসার হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকতো, প্রজাপতি ডানা মেলে রঙের মেলা সাজাতো। আজ কেন জানি নি:সঙ্গতা আমাকে জড়িয়ে ধরছে বারবার। এখানেই আমি একদিন হারিয়েছি আমার ভালবাসার সম্পদ সেলেস্তিনাকে।কচিঁ শালপাতার ফাঁক দিয়ে পড়ন্ত সূর্যালোকে ভেসে উঠছে চিরচেনা সেই মুখ। আমিও যেন মিলিয়ে যাচ্ছি, হারিয়ে যাচ্ছি সেই অতিতে। কাঁঠবিড়লীর সড়াত্ শব্দ। ফিরে দেখি, বাচ্চা কোলে নিয়ে আধ বয়সি এক মহিলা আমার পাশে। পরিচয়ে বল্‌ল আমি বাসন্তী। সেলেস্তিনার মামাতো বোন। তখনো চিনতে পবরিনি আমি। বাসন্তীর এখন চার চারটি ছেলে-মেয়ে। চেনবো কি করে? অল্প বয়সে বিয়ে তার উপর চারচারটি ছেলে-মেয়ের মা। অনেক বছর পর দেখা, চেহারার পরিবর্তন হয়েছে অসম্ভ রকমের। জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছ তুমি? সেলেস্তিনাদের কোন খোঁজ জান?
অনেক দিন ধরে ওদের সাথে আমাদের আর যোগাযোগ নেই, বল্‌ল বাসন্তী। এ বছর বাহা উত্সবে সেলেস্তিনাদের এক আত্মীয় এসেছিল বাসন্তীদের বাড়ীতে। বাসন্তী তার কাছেই শুনেছে, সেলেস্তিনা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিন দিনাজপুর(বালুরঘাট) হাপাতালের মেট্রোন। ছেলে-পুলের কথা জিজ্ঞেস করারতে বাসন্তী বলল, এখনো বিয়ে করেনি। মনে পড়লো তার লেখা কাগজের টুকরোর কথা। বিদায় বেলায় হয়তো এরকম কোন আবেদন বা অঙ্গীকার লিখা ছিল তাতে। সময় পেলেই পুরনো কাগজের বস্তায় ঐ চিরকুট খুজিঁ।
কাল যাকে লিফ্‌ট দিলাম। তার মাঝে আমার হারিয়ে যাওয়া সেলেস্তিনাকে খোঁজার চেষ্ঠা করছিলাম। কিন্তু সে সেলেস্তিনা নয়। সে লাকি মার্ডি।

Check Also

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো দিল্লী বইমেলা।১টি রিপোর্ট '৷ ৷৷ আনন্দ ৷৷

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো দিল্লী বইমেলা।১টি রিপোর্ট ‘৷ ৷৷ আনন্দ ৷৷

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো দিল্লী বইমেলা। নিরদ মজুমদার-এর ১ টি রিপোর্ট —————————————————————— তোমাদের তীর্থ দেখে এলে?তীর্থদর্শন আমি …

কবি সম্মেলন ও 'নিনি' পত্রিকা প্রকাশ । নিজস্ব প্রতিবেদন ৷ বহরমপুর ৷

কবি সম্মেলন ও ‘নিনি’ পত্রিকা প্রকাশ । নিজস্ব প্রতিবেদন ৷ বহরমপুর ৷

নিজস্ব প্রতিবেদন,বহরমপুর,১৯-০৩-২০১৮ ॥ ১৮ মার্চ বহরমপুরের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাপীঠের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হল কবি সম্মেলন অনুষ্ঠান।বহরমপুরে কবি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *