রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জীবিকাবাঙ্গালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্করক
উল্লেখযোগ্য লেখনীসুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (ডিসেম্বর ৯, ১৮৮০- ডিসেম্বর ৯, ১৯৩২) উনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তাঁকে বাঙ্গালী নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়।[১]
জন্ম
রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান
রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। তাঁর পিতা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। তাঁর মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুননেসা ও হুমায়রা, আর তিন ভাই যাদের একজন শৈশবে মারা যায়।
ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন
প্রথম জীবন
তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদেরকে ঘরে আরবী ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও করিমুননেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান।
যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সম্পর্কে বঙ্গের মহিলা কবি গ্রন্থে লিখেছেন,[২]
“বঙ্গের মহিলা কবিদের মধ্যে মিসেস আর,এস, হোসায়েনের নাম স্মরণীয়। বাঙ্গালাদেশের মুসলমান-নারী-প্রগতির ইতিহাস-লেখক এই নামটিকে কখনো ভুলিতে পারিবেন না। রোকেয়ার জ্ঞানপিপাসা ছিল অসীম। গভীর রাত্রিতে সকলে ঘুমাইলে চুপি চুপি বিছানা ছাড়িয়া বালিকা মোমবাতির আলোকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাছে ইংরাজী ও বাংলায় পাঠ গ্রহণ করিতেন। পদে পদে গঞ্জনা সহিয়াও এভাবে দিনের পর দিন তাঁহার শিক্ষার দ্রুত উন্নতি হইতে লাগিল। কতখানি আগ্রহ ও একাগ্রতা থাকিলে মানুষ শিক্ষার জন্য এরূপ কঠোর সাধনা করিতে পারে তাহা ভাবিবার বিষয়।”
[সম্পাদনা]সাহিত্যচর্চার সূচনা
১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। বিয়ের পর তিনি ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামে পরিচিত হন। তাঁর স্বামী মুক্তমনা মানুষ ছিলেন, রোকেয়াকে তিনি লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন এবং একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন। রোকেয়া সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যজগতে পদার্পণ করেন।
মুসলিম সমাজে নারীশিক্ষা বিস্তার
১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। এর পাঁচ মাস পর রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল নামে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ভাগলপুরে। ১৯১০ সালে সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলার ফলে স্কুল বন্ধ করে তিনি কলকাতায় চলে যান। এখানে ১৯১১ সালের ১৫ই মার্চ তিনি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল পুণরায় চালু করেন।[৩] প্রাথমিক অবস্থায় ছাত্রী ছিল ৮ জন। চার বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪-তে। ১৯৩০ সালের মাঝে এটি হাই স্কুলে পরিণত হয়।
সাংগঠনিক কর্মকান্ড
স্কুল পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত রাখেন। ১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের সংগঠন আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন।[২] বিভিন্ন সভায় তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
রচনা
তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা Sultana’s Dream। যার অনূদিত রূপের নাম সুলতানার স্বপ্ন। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলি হলঃ পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর। তাঁর প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর রচনা দিয়ে তিনি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, ধর্মের নামে নারীর প্রতি অবিচার রোধ করতে চেয়েছেন, শিক্ষা আর পছন্দানুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড়া যে নারী মুক্তি আসবে না – তা বলেছেন।
মৃত্যু
বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল সেন্টারে বেগম রোকেয়ার প্রতিকৃতি, পায়রাবন্দ, রংপুর
১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র, পায়রাবন্দ, রংপুর
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে বাংলাদেশ সরকার একটি গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে পৈতৃক ভিটায় ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির ওপর নির্মিত হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। এতে অফিস ভবন, সর্বাধুনিক গেস্ট হাউজ, ৪ তলা ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি ইত্যাদি রয়েছে। স্মৃতিকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়।[৪]
[সম্পাদনা]স্বীকৃতি
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের ৭ম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগের একমাত্র পুর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ ৮ অক্টোবর ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর ২০০৯ সালে ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ হিসেবে তাঁর নামকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়।
এছাড়াও, মহিয়সী বাঙালি নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদানকে চীরস্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসনের জন্য “রোকেয়া হল” নামকরণ করা হয়।
তথ্যসূত্র
↑ নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া
↑ ২.০ ২.১ “বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, ৮ম সংস্করণ, ১৯৯৭ইং, পৃষ্ঠাঃ ২৫০-১
↑ সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, সম্পাদকঃ অঞ্জলি বসু, ৪র্থ সংস্করণ, ১ম খণ্ড, ২০০২, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, পৃ. ৪৯৫
↑ রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র এখন শ্রমিক তৈরির কারখানা
বিশিষ্ট সমাজসেবী ও লেখিকা বেগম রোকেয়া বা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন-এর জন্ম অধুনা বাংলাদেশের রংপুরের এক গ্রামে । ১৮৮০ সালের ডিসেম্বর ৯-এ । তাঁর পরিবার ছিল রক্ষনশীল । তবে বিবাহের পর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বামী সাখাওয়াত হোসেন-এর উত্সাহদানে শুরু করেন সাহিত্যচর্চা । কিন্তু মাত্র ২৮ বছর বয়সে স্বামীকে হারান । তিনি ভাগলপুরে ও পরবর্তীকালে কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল নামে স্কুল স্থাপন করেন । পাশাপাশি নারীশিক্ষাপ্রসারে ও সমাজ সংস্কারের কাজে ব্রতী হন । বেশ কিছু প্রবন্ধ গল্প উপন্যাসে তিনি সাজিয়েছেন তাঁর সাহিত্য জগত । ১৯৩২ সালের এই ৯ ডিসেম্বরেই তিনি প্রয়াত হন ।
Edi:SRoy